জাতিসংঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে বাংলাদেশী আমিরা হক

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১৫, ২০১৫ সময়ঃ ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ

amiraতিনিই প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল (ইউএসজি) হওয়ার বিরল সম্মান অর্জন করেছেন। শুধু মা-বাবার নামই নয়, আমিরা হক আজ বিশ্বের বুকে উজ্জ্বল করেছেন মাতৃভূমির নাম। ১৯৭৬ সালে যোগ দেন জাতিসংঘে।

মাঠ-সহায়তা বিভাগে কাজ করেছেন ১৯ বছর এবং ১৮ বছর ছিলেন সদর দপ্তরে।এখন আছেন আফ্রিকায়। আমিরা হক প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি অর্জন করেছেন জাতিসংঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ার সম্মান।২০১২ সালের ১১ জুন জাতিসংঘের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘ফিল্ড সাপোর্ট’ বিভাগের প্রধানের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি।

৩৭ বছর ধরে জাতিসংঘের বিভিন্ন পদে কর্মরত থেকেছেন আমিরা হক।শুরুটা করেছিলেন ১৯৭৬ সালে।তখন তিনি ছিলেন জুনিয়র প্রফেশনাল অফিসার।কর্মজীবনের শুরুতে ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়।দুই বছর পর ১৯৭৮ সালে সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে বদলি হন আফগানিস্তানে।১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ইউএনডিপি সদর দপ্তরের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম সুষ্ঠু পরিচালনা ছিল তাঁর অন্যতম দায়িত্ব।

পাশাপাশি থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভুটান-বিষয়ক ডেস্ক অফিসারের দায়িত্বও পালন করেন।এ ছাড়াও ১৯৮৫ থেকে ৮৭ সাল পর্যন্ত নারীদের জন্য জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলেরও (ইউনিফেম) দায়িত্বে ছিলেন।১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পালন করেছেন মালয়েশিয়ায় ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের দায়িত্ব।এই পদে লাওসে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত।জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে আফগানিস্তানে ছিলেন ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত।

একই পদে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন সুদানে।গেল বছর ইউএসজি পদে যোগদানের আগে ২০০৯ সাল থেকে ছিলেন পূর্ব তিমুরে জাতিসংঘের সমন্বিত মিশনের (ইউএনএমআইটি) প্রধান এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সে-দেশবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি।

নানা সময়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপ-বিশেষ প্রতিনিধি, সুদানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের সমন্বয়ক, আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপ-বিশেষ প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন আমিরা হক।

এ ছাড়াও নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সদর দপ্তরে ‘দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং পুনর্বাসন’ বিভাগের উপপরিচালক এবং উপসহকারী প্রশাসক হিসেবেও কাজ করেছেন আমিরা হক। আমিরার প্রথম মিশন ছিল আফ্রিকার সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে শান্তি স্থাপন। পরিচিত।এ কঠিন কাজের দায়িত্ব নিয়ে আমিরা ঘুরে বেড়িয়েছেন বিপদসঙ্কুল এলাকাগুলোতে।গিয়েছেন সুদানের দারফুরে।

আমিরা হকের জন্ম ১৯৫০ সালে ঢাকায়।বাবা ইনামুল হক এবং মা নাজিরা বেগম।পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।বাবা ছিলেন নামকরা প্রকৌশলী।প্রয়াত এই প্রকৌশলীর আরেকটি বিশেষ পরিচয় রয়েছে।তিনি বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি, যিনি মরণোত্তর চক্ষুদান করেছেন।আমিরার বড় দুই বোন- আমিনা আহমেদ এবং তাহিরা হক।ছোট দুই ভাই রিজওয়ানুল হক ও ইহসানুল হক।

ব্যক্তিগত জীবনে আমিরা হক দুই সন্তানের মা।ছেলে শিহান পেরেরা আর মেয়ে নাদিয়া পেরেরা।১৯৫৬ সালে ভারতের শিলংয়ের লরেটো কনভেন্ট স্কুলে আমিরা হকের লেখাপড়া শুরু।১৯৬২ সালে দেশে ফিরে ভর্তি হন ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলে।এরপর ১৯৬৮ সালে ঢাকার হলিক্রস মহিলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ওহিয়োর অঙ্ফোর্ডের ওয়েস্টার্ন কলেজ ফর উইম্যান থেকে স্নাতক পাস করেন।দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।একটি অর্জন করেন ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক থেকে।বিষয় ছিল কমিউনিটি অর্গানাইজেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং।অন্যটি ইউনিভার্সিটি অব কলাম্বিয়া থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ওপর।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G